সিবিএন ডেস্ক:
পশ্চিমের পর্যটন শিল্প উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পাঠিয়ে কোটি কোটি ডলার রোজগার করলেও বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে বাস্তবমুখী কোনো পরিকল্পনা নেই। রয়েছে নানা সংকট। এ খাতের প্রত্যেক পদে পদে চলছে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। ফলে উন্নয়ন হচ্ছে যৎসামান্য। এখানে লোক দেখানো হাক-ডাক থাকলেও নেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন।
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে ‘হালাল ট্যুরিজম’কে উৎসাহিত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাজাহান কামাল।
পর্যটনমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আবার অনেকে ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেছেন, ‘হালাল ট্যুরিজম’ সমাজ জীবনকে অবশ্যই সুশৃঙ্খল করবে।
মোস্তফা কামাল মিনহাজ নামে একজন পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, ‘হালাল ট্যুরিজম’টা আসলে কী, পর্যটনমন্ত্রী কি এটির ব্যাখ্যা দিতে পারবেন? হারাম ও হালাল হচ্ছে দুটি ধর্মীয় শব্দ। এসব শব্দ ট্যুরিজম সঙ্গে যোগ করে কী ফল হবে জানি না, তবে এই ধরনের স্লোগান দেয়ায় দেশে সব ধরনের পর্যটক আসবে না, এটা নিশ্চিত।
আবার এই মতের বিপক্ষেও বলেছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও ট্যুরিজম এক্সপার্ট কাজী ওয়াহেদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এটা নিয়ে ট্যুরিজম সেক্টরে মত প্রার্থক্য থাকতে পারে, বাস্তবে তার ভিত্তি হবে দুর্বল। কারণ সমাজ জীবনে কম-বেশি ক্ষতিকর বিষয়াদিকেই ইসলামে হারাম করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ হারামের সংজ্ঞা হিসেবে বলে থাকেন, ‘যা খারাপ তাই হারাম’। সকল জতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ হালাল ট্যুরিজম গ্রহণ করে উপকৃত হবেন। এই অর্থে বলা যায়, হালাল ‘ট্যুরিজম’ সর্বজনীন।
‘হালাল ট্যুরিজম’ বিষয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ড. নাসির উদ্দিনও মনে করেন, এতে করে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে। সেই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম-বর্ণের পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন। তার মতে, এতে লাভ কম হলেও ক্ষতি হবে না।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ৯৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটক রয়েছেন। তবে দেশে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও দিনে দিনে বাংলাদেশে পর্যটনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দারুণ সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প।
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের পর পর্যটন শিল্প হতে পারে রাজস্ব আদায়ের বিরাট সম্ভাবনাময় খাত। আর সেই সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সরকার পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
২০১৬-২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটন খাতে বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন, আমরা প্রত্যাশা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাত জিডিপিতে ২ দশমিক ১ শতাংশ অবদান রাখছে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। অনেক প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতা, সমস্যা, সঙ্কট, ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে খুব অল্প পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে বাংলাদেশ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।